প্রভাতী ডেস্ক: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীতে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো।
শুক্রবার বিকাল ৩টায় লাল সবুজ পতাকা, রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে র্যালি নিয়ে কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়ে ঘুরে ফের পল্টনে সমবেত হন নেতাকর্মীরা।
শোভাযাত্রা শুরুর আগেই পল্টনের ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কে জমায়েত হন ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ব্যানার হাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল মিছিল নিয়ে আসেন তারা।
বিএনপির র্যালি ঘিরে নয়া পল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর সড়ক, শান্তিনগর ও মালিবাগের সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মালিবাগ মোড়ে ব্যারিকেড বসায় পুলিশ।
শোভাযাত্রার কারণে নয়া পল্টনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কাকরাইল, মালিবাগ, বিজয়নগর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে তৈরি হয় ব্যাপক যানজট।
বিএনপির শোভাযাত্রার প্রথম সারিতে ছিলেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতাকর্মীরা। এরপর মহিলা দল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, শ্রমিক দল, যুব দল ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ছিলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে তারা মিছিলে অংশ নেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবি করেন স্লোগানে স্লোগানে। ছোট ছোট ট্রাকেও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি ঝোলানো হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণের দৃশ্য অভিনয় করে দেখান জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কর্মীরা।
র্যালি শুরুর আগে নয়া পল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বিএনপি। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “আপনারা সকলে জানেন যে, সরকারের বাধা-বিপত্তি সত্বেও আমাদের ১০টি বিভাগীয় গণসমাবেশে সফলভাবে হয়েছে। এই সমাবেশগুলো জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সফল হয়েছে। আজকে যখন দেশের মানুষ এই সমাবেশগুলোর মাধ্যমে বার্তা দিয়েছে তাদেরকে মানুষ আর চায় না, তখন তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ়, দিশেহারা হয়ে নানা রকমের কথা বলছে।
“আমাদের ১০টি সমাবেশে প্রমাণ করেছি, আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। এই ১০টি সমাবেশের কোনো জায়গায় কোনো অরাজকতা, কোনো ভায়োলেন্স, কোনো বিশৃঙ্খলা হয় নাই। অথচ কালকে (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা নাকি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য সমাবেশ করি।”
বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন, এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে তারা এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। তারা বলেন, আমরা নাকি ভায়োলেন্স করতে চাই। ভায়োলেন্স যদি এদেশে করে থাকে তাহলে সেটা আওয়ামী লীগ করেছে।”
সরকারের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ তুলে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে তাদের লুটপাটের কারণে অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত, দেশে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজমান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ খেতে পাচ্ছে না, মানুষ দিশেহারা। দেশ এক চরম সংকটে পড়েছে।”
বিএনপির ১০ দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, এটা জনগণের দাবি। আমরা এই দাবির সমর্থনে এই সরকারকে বিদায় করার লক্ষ্যে যেসকল দল তারা কাজ করবে তাদেরকে আমাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছি।”
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহাজাদা মিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মীদের র্যালিতে অংশ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুবদলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজিব আহসান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারাও পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে যোগ দেন শোভযাত্রায়।
Leave a Reply