মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩য় টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান করে বাংলাদেশ। পরে জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার খেললেও ৬ উইকেটে ১৪২ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জেতায় বাংলাদেশ পেয়েছে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ। এই জয়ের মধ্যদিয়ে জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর চতুর্থ কোনো দলকে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইট ওয়াশ করলো বাংলাদেশ।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। স্যাম কারানের তৃতীয় বলে চার হাঁকিয়ে শুরু করেন রনি তালুকদার। এরপর তিন ওভারে বাংলাদেশ তোলে ২৩ রান। সময়ের সঙ্গে অবশ্য রানের গতিতে কিছুটা লাগাম টানতে হয়। রনি ভুগেছেন জফরা আর্চারের পেস ও আদিল রশিদের স্পিনে। মাঝে একবার জীবনও পান তিনি। তবে এই ব্যাটারের আত্মবিশ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে এসে যখন তিনি আউট হন, ততক্ষণে বাংলাদেশ পেয়ে গেছে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে টাইমিংটা ঠিকঠাক মতো হয়নি রনির, ৩ চারে ২২ বলে ২৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। লিটন দাস অবশ্য সফল ছিলেন এই শটে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে অনুশীলনে সুইপ ও রিভার্স সুইপ অনুশীলনে ব্যস্ত থাকা এই ব্যাটার ম্যাচেও খেলেছেন ভালোভাবে। আর তিনি ফর্মে থাকলে তার শট বরাবরই দেখার মতো।
সব মিলিয়ে সময়ের সঙ্গে লিটন আরও বেশি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। তার সঙ্গে ইনফর্ম নাজমুল হোসেন শান্তও করেছেন দারুণ ব্যাটিং। বড় শট খেলেছেন, রানও তুলেছেন প্রয়োজন মিটিয়ে। লিটন দাসের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৫৮ বলে ৮৪ রানের। এই জুটির ৪৮ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে, এই ব্যাটার দেখা পান হাফ সেঞ্চুরিরও। ১০ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৫৭ বলে ৭৩ রান করেন লিটন, শেষ ৮ বলে অবশ্য করেন কেবল ৩ রান।
ক্রিস জর্ডানের স্লোয়ারে মিড-উইকেটে পাতা ফাঁদে পা দেন লিটন। শুরুর আশা জাগানিয়া ব্যাটিং অবশ্য শেষে এসে হতাশই করেছে। লিটনের আউটের পর সাকিব আল হাসান ও শান্ত রান তুলতে পারেননি। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে কেবল ২৭ রান। ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪৭ রান করে শান্ত ও সাকিব ৬ বলে ৪ রান করে অপরাজিত থেকেছেন।
ইংলিশদের পক্ষে ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়েছেন আদিল রশিদ, ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন ক্রিস জর্ডান। ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের নামার পর বাংলাদেশের দরকার ছিল ভালো শুরুর। সেটি এনে দেন তানভীর আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন ঘরোয়া লিগের নিয়মিত পারফরমার। কিন্তু দুপুরে শাহরিয়ার নাফিসের কাছ থেকে যখন তিনি ‘অভিষেক ক্যাপ’ নেন, নিশ্চয়ই এটাও উপলব্ধি করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভারটা আলাদা।
কিন্তু তানভীরের কাঁধ যে অনেক চওড়া, বোঝাতে তিনি সময় নেন তিন বল। ইনিংসের তৃতীয় বলে ফিল সল্টকে পরাস্ত করেন তিনি। এতে অবশ্য বড় কৃতিত্ব আছে লিটন দাসের, স্টাম্পিং করতে ০.১৪ সেকেন্ড সময় নেন তিনি। এরপর উড়ন্ত বাংলাদেশের জন্য কাজ আরও সহজ প্রায় করেই দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই তার বল লাগে দাভিদ মালানের পায়ে।
আম্পায়ার আঙ্গুলও তুলে দেন। কিন্তু এরপর রিভিউ নেন মালান। যদিও টিভি রিপ্লে দেখে ব্যাটে লাগার সিদ্ধান্তকে কিছুটা ‘বিতর্কিতই’ মনে হয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। জস বাটলার ও মালানের জুটি ছুটতে থাকে পঞ্চাশ পেরিয়েও। তাতে আঘাত হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। হাফ সেঞ্চুরি ছোঁয়ার কিছুক্ষণ বাদেই তার বলে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেন মালান।
৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪৭ বলে ৫৩ রান করে পুল করতে গিয়ে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি ইংলিশ ব্যাটার। এরপরও বাংলাদেশের বড় বিপদ হয়ে ছিলেন জস বাটলার। বিশ্ব ক্রিকেটেই আতঙ্কের এক নাম তিনি। তাকে ফেরাতে বোধ হয় দরকার ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের থ্রোয়ের মতো কিছুই। মালান আউট হওয়ার পরের বলেই কাভার থেকে ডিরেক্ট থ্রোতে বাটলারের স্টাম্প ভাঙেন মিরাজ।
Leave a Reply