বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতি বাকলিয়া থানা শাখার ত্রিমাসিক সভা ল্যাব এইড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিশেষ আয়োজনে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) নগরীর বাকলিয়া রাহাত্তারপুল ব্লুমিং পার্ক সংলগ্ন আল হেরাম হসপিটালের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার তাওহীদুল ইসলাম সাঈদীর সঞ্চালনায় এবং সভাপতি গ্রাম ডাক্তার রিপন দাশ গুপ্তের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আল হেরাম হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: মো: বাবর চৌধুরী।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, রোগীদের জন্য একজন গ্রাম ডাক্তারের অনেক ভূমিকা রয়েছে। হঠাৎ কোন লোক অসুস্থ হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া থেকে শুরু করে আমাদের কাছে বা হাসপাতালে পৌছানো পর্যন্ত কিন্তু এই গ্রাম ডাক্তারই বেশীরভাগ সময় করে থাকলেও তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলিত। তাই আমি তাদের পাশে থাকতে চাই।
নিজেদের নিরলস পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত আল হেরাম হসপিটাল বাকলিয়াবাসীর জন্য একটা উপহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠিত চাকরী ছেড়ে বাকলিয়াবাসীর সেবা করতে এই হসপিটাল করেছি। এলাকাবাসীকে আর দূরের হসপিটালে যেতে হবে না এখানেই মিলবে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা। এই হসপিটালে ২৪ ঘন্টা ল্যাব, ফার্মেসী, জরুরী বিভাগ, অপারেশন, এ্যাম্বুলেন্স সুবিধা, ৭দিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, সকল পরীক্ষা – নিরীক্ষায় ৩০% ছাড়াও গরীব রোগীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। নরমাল ডেলিভারির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ টিম রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গ্রাম ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যেকোন প্রয়োজনে আমাকে পাশে পাবেন। আজকে যারা উপস্থিত ছিলেন সবার সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন, বাকলিয়াবাসীকে আমাদের হসপিটাল ও সেবা সম্পর্কে জানাবেন। আমরা হসপিটাল প্রতিষ্ঠা করলেও আমরা একা এই প্রতিষ্ঠানকে বহুদূর এগিয়ে নিতে পারবো না, এগিয়ে নিতে হলে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা আবশ্যক। আমি চাই গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতি বাকলিয়া থানা শাখাও এই হসপিটালের শুভাকাঙ্ক্ষী হউক।
সম্মানীত অতিথি ল্যাব এইড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সেলস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, ল্যাব এইড ফার্মাসিউটিক্যালস হলো ল্যাব এইড গ্রুপের একটি সিস্টার কনসার্ন প্রতিষ্ঠান।
এই কোম্পানির প্রোডাক্ট দেশের প্রথম শ্রেণির কোম্পানির চাইতে কোন অংশে কম নয়। কিন্তু ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও প্রথমদিকে কোম্পানির কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ল্যাব এইড ফার্মাসিউটিক্যালসকে হয়তো অনেকে চিনেন না। ভুল সিদ্ধান্ত বলতে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা শামীম সাহেব ছিলেন একজন ডাক্তার। দেশের ৬৪ জেলায় কোম্পানির ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেসব ডাক্তার চেম্বার করেন তারা যদি কোম্পানির ঔষধ লিখেন তাহলে কোম্পানিকে আর পেছনে থাকাতে হয় না।
তাই কোম্পানি ডাক্তার ভিজিট কিংবা প্রচারের দিকে মনোযোগ দেননি। কিন্তু কোম্পানির সাথে ডাক্তারদের চিন্তাধারায় মিলেনি বলে কোম্পানি সাড়া পায়নি। পরে যখন বুঝতে পারলেন প্রচার ছাড়া ঠিকে থাকা সম্ভব নয়। এরপরে
২০১৮ সালে আমাদের কোম্পানি লিডিং কোম্পানির একটি ম্যানেজম্যান্ট টিমের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলো। শুরু হলো ভিন্ন আঙ্গিকে পথচলা। আবার ২০১৯ সালে করোনা মহামারীর কারণে আপনাদের কাছে আসতে একটু বিলম্ব হলো। বর্তমানে আমাদের কোম্পানির ৩০০০ স্টাফ রয়েছে, ৩ কোটি টাকার কোম্পানি এখন ৩০ কোটি টাকায় উত্তীর্ণ হয়েছে। বিএমএ থেকে শুরু করে সবার প্রোগ্রামে আমরা যাচ্ছি, চিকিৎসা কাজে সম্পৃক্ত কাউকে বাদ দিয়ে কখনো একটা ঔষধ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কাঙ্খিত সাফল্যে পৌঁছাতে পারে না। আপনারা সবাই এই কোম্পানীর সাথে থাকবেন। আমরাও আপনাদের সাথে থাকবো, ল্যাব এইডকে গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির একটা অংশ বানাবেন এই আশা রইল। আমাদের ঔষধের গুণগত মান আপনারাই বিচার করবেন। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা শামীম সাহেব বলতেন যা আমি নিজে খেতে পারবো না, সেটা উৎপাদনও করবো না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন অন্য বড় কোম্পানির চাইতে ভালো ফ্যাসেলিটিজ দিলে এবং আমাদের ঔষধ তাদের মত কাজ করলে কেন একটা নতুন কোম্পানীকে সুনজরে রাখবেন না? আল হেরাম হসপিটালকেও সুদৃষ্টিতে রাখার অনুরোধ জানান তিনি ।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার মাহমুদুল হাসান বলেন, দীর্ঘসময় আমরা ডাক্তার পদবী ব্যবহার করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে এসেছি। কিন্তু সরকার যখন ২০১০ সালে আইন করলেন এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রীধারী ছাড়া অন্যান্য ডিগ্রি কিংবা ডিপ্লোমাধারীরা ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না তখন ডাক্তার পদবী ব্যবহার করা অযৌক্তিক ও অন্যায়। অনেকে ৩-৬ মাসের ডিপ্লোমা করে এখনো ডাক্তার পদবী ব্যবহার করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ধরনের অনেকে কিন্তু প্রতিনিয়ত আইনের সম্মুখীন হচ্ছেন, পার পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমাদের সংগঠনের কোন সদস্য গ্রাম ডাক্তার পদবী ব্যবহার করার পরেও যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক হয়রানির শিকার হন সেটার দায়িত্ব সংগঠন নিবে। সংগঠনের সুবিধা নেওয়ার জন্য অবশ্যই যোগ্যতা থাকতে হবে এবং সদস্য হয়ে সংগঠনের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে এবং জেলা উপজেলায় যেখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর কোন সদস্য গ্রাম ডাক্তার পদবী ছাড়া বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক কিংবা প্রাথমিক চিকিৎসক এই ধরনের পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। সংগঠন ছাড়া কোন ব্যক্তি কখনো একা এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন না, তাই নিজের সুরক্ষার জন্য সবাইকে দ্রুত সংগঠনের সদস্য হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে সংগঠনও শক্তিশালী হবে। আমাদের নেতা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গ্রাম ডাক্তার আব্দুস সাত্তার সাহেব এখনো এই সংগঠনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। সভার উদ্বোধন করেন
অর্থ সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার শংকর কুমার দেব।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সহ সভাপতি গ্রাম ডাক্তার মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা
গ্রাম ডাক্তার মো: ইকবাল।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা
গ্রাম ডাক্তার এস.কে তালুকদার, গ্রাম ডাক্তার হরিপদ শীল, সহ সভাপতি গ্রাম ডাক্তার জিএম রাশেদ চৌধুরী এবং ল্যাব এইড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আঞ্চলিক সেলস ম্যানেজার মো: আব্দুস সাত্তার।
সভাপতির বক্তব্যে গ্রাম ডাক্তার রিপন দাশ গুপ্ত
বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসকদের অবদান অনেক বেশি। কিন্তু বিশেষ একটি মহল সেটা মানতে নারাজ। একজন সাধারণ রোগী রোগাক্রান্ত হলে প্রথমে এলাকার স্থানীয় প্রাথমিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তখন তার রোগ পর্যবেক্ষন করে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়। আমার পিতাও ছিলেন একজন গ্রাম ডাক্তার।
তার সুনাম ও খ্যাতির কারণে তাঁর নামে গ্রামে সড়ক পর্যন্ত হয়েছে। আমার ২ ভাই ডাক্তার, ছোট ছেলে চমেকহা এমবিবিএস ২য় বর্ষের ছাত্র। ভালো কাজের ফল না পেলে কষ্ট লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন আমরা যথাযথ এবং ভালো ঔষধ লিখার পরেও এমবিবিএস ডাক্তাররা যখন অবজ্ঞা করেন সেটা খুবই দুঃখজনক। ডাক্তার বাবর সাহেব তাদের প্রতি খুবই আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন একজন সিনিয়র ডাক্তার হওয়ার পরেও উনার মধ্যে কোন প্রকার অহংকার নেই, সবসময় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। তাই উনার হসপিটালকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যও সবাইকে কাজ করতে হবে। নিজেদের প্রয়োজনে সকল ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকদেরকে সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। নিজ সংগঠনের এই আলোচনা সভাকে সফল করতে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য ল্যাব এইডের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন আগামীতে আরো বড় প্রোগ্রাম হবে এভাবে আমাদের পাশে থাকলে আমরাও প্রেসক্রিপশন লিখার সময়ও আপনাদেরকে স্মরণ করবো।
সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ সদস্যরা মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply