রমজান মাসে অতিরিক্ত লাভ না করে ব্যবসায়ীদের সংযমী হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেরও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে বুধবার(১৫ মার্চ) এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি বারবার অনুরোধ করি, মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না, মানবিক দায়িত্ব আছে। আমরা সেন্সেবল ব্যবসায়ী চাই। পৃথিবীর সব জায়গায় উৎসবের সময়ে মানুষকে একটু ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রম।
“রমজান এসেছে ব্যবসায়ীদের বলব আপনারা একটু সংযমী হোন। যা ন্যায্য মূল্য সেটাই নেবেন, আমরা সারাদিন পাহারা দিতে পারব না। আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, আপনারা দায়িত্ব নেবেন কি না।”
ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “রমজানকে সামনে রেখে হুমড়ি খেয়ে কেনার কিছু নেই। একটু সাশ্রয়ী হোন। বাজারে একটা সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। পাঁচ কেজি পেঁয়াজের জায়গায় আপনারা ২০ কেজি কেনা শুরু করলে বাজারে হুট করে সরবরাহ চলে আসবে না।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
কোনো কোম্পানির চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ভোক্তাদের আগ্রহী না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “একটা মোটরসাইকেলের উৎপাদন মূল্যের কমে কেউ আপনাকে মোটরসাইকেল দিয়ে দেবে, এসব দেখে আকৃষ্ট হবেন না। এরা দিনশেষে ঠকাবে।
“একটা সময় আমাদের দেশের মানুষ জানতেন না ভোক্তা হিসেবে তারা একটি অধিকার আছে, এখন মানুষ জেনেছে, ভোক্তা অধিকার তার কাজ করে যাচ্ছে, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। আমাদের অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে যদি আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি।”
রমজানে টিসিবির কার্যক্রম নিয়ে টিপু মুনশি বলেন, “টিসিবি আগে একবার দিত, এখন দুবার দেবে। ডাল, তেল, চিনি, চাল, ঢাকায় খেজুর দেবে, গ্রামে ছোলা-বুট দেবে। এক কোটি মানুষকে দেবে, এক কোটি মানুষকে দেওয়া মানে এক কোটি পরিবারকে দেওয়া।”
সম্প্রতি কাতারে এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলেনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কাতারে পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনে ছিলাম। আমরা এখনও এলডিসি আছি। তবে এবারই আমাদের এলডিসিতে শেষ যোগ দেওয়া; কারণ ২০২৬ সালেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে যাব। নির্বাচন এলে অনেক কথাই বলা হয়ে থাকে, তবে প্রধানমন্ত্রী কোথায় নিয়ে গেছেন তা বিশ্বনন্দিত।”
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, এসব প্রতিষ্ঠান যেমন শক্তিশালী ও বেগবান হওয়া দরকার তা এখনও হয়ে উঠতে পারেনি। জনগণ তাদের কাজে সন্তুষ্ট, কিন্তু তাদের সক্ষমতা যথেষ্ট না। দুই তিনজন কর্মকর্তা দিয়ে একটা জেলায় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব না। তাই দপ্তরটিকে শক্তিশালী করার দাবি জানাই।”
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও বাজার ঠিক রাখতে কাজ করছি। বৈশ্বিক সংকটে বাজারে সংকটের প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। তবু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে রচনা আহ্বান করেছিল ভোক্তা অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা সিসিএমএস।
‘কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এর মাধ্যমে ভোক্তার অভিযোগ গ্রহণ থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। ফলে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি ছাড়া অন্যান্য প্রক্রিয়ায় ভোক্তার সশরীরে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না।
পাশাপাশি ভোক্তার অভিযোগের বিপরীতে জরিমানা করা অর্থের ২৫ শতাংশ প্রণোদনা নগদের পরিবর্তে ডিজিটাল বা ই-পেমেন্টে পরিশোধ করা হবে।
Leave a Reply