বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতি বাকলিয়া থানা শাখার উদ্যোগে চিকিৎসা বিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও গুণিজন সম্মাননা শনিবার (১১ নভেম্বর) শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের রাজখালী কেআরএস কনভেনশন হলে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল চট্টগ্রাম’র সৌজন্যে অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে চিকিৎসা বিষয়ক বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চিকিৎসা গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: কামরুল হাসান লোহানী। তিনি বলেন, এলাকার লোকজন কোন রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের কাছে যান। সেই সুযোগে কতিপয় প্রাথমিক চিকিৎসক নিজেকে জাহির করতে প্রথম ধাপে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিক দেন। যার কারণে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হয়। শুধু প্রাথমিক চিকিৎসকরা নয় অনেক এমবিবিএস ডাক্তারও রোগের শুরুতেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতেছেন, যা কোন অবস্থায় কাম্য নয়। ডেঙ্গু রোগীর প্রায় ৯৫ ভাগ প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক পেয়েছি। মন্টিলুকাস্টের সর্বনিন্ম কোর্স ১ থেকে দেড় মাস হলেও অনেক চিকিৎসক ১০-১৫ দিনের কোর্স দিয়ে থাকেন। ভুল চিকিৎসার কারণে গ্রাম ডাক্তারের দূর্ণাম হবে। কারণ পরবর্তীতে রোগী যখন এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর জানতে পারবে সে ভুল চিকিৎসার শিকার তখন রোগী মনে আঘাত পাবে এবং উক্ত চিকিৎসকের কাছে আর কখনো যাবেনা।
প্রাথমিক চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন যতটুকু বুঝবেন ততটুকু চিকিৎসা করবেন, না বুঝলে রেফার করবেন। আন্দাজে রোগীর রোগ নিয়ে মন্তব্য করবেন না। যদি না বুঝে রোগীকে কোন জটিল রোগের ধারণা দেওয়া হয় তাহলে ঐ রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। কোম্পানি কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে কিছুক্ষেত্রে ভুল ঔষধ প্রয়োগ হচ্ছে। কোন ডিগ্রীর ডাক্তার কতটুকু ঔষধ প্রয়োগ করতে পারেন সেটার বিধান আছে, কিন্তু এসব মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে না। সরকারের উচিত প্রাথমিক চিকিৎসকদেরকে কম হলে ১ বছরের ট্রেনিং করানো। গ্রাম ডাক্তারদের নিজেকে ছোট ভাবার কোন কারণ নেই, যখন থেকে প্রেসক্রিপশন লিখা শুরু করছেন তখন থেকে ভাবতে হবে অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতেছেন।
বাকলিয়া থানা শাখার সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার রিপন দাশ গুপ্তের সভাপতিত্বে এবং বাকলিয়া থানা শাখার সহ সভাপতি গ্রাম ডাক্তার জিএম রাশেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, আমরা এমন চিকিৎসক যারা ভোর কিংবা গভীর রাতেও রোগী দেখি। রোগীর বিপদে আমরাই প্রথমে এগিয়ে যাই। এরপরেও আমরা অবহেলার শিকার। আমাদের দাবী দাওয়া নিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ গ্রাম ডাক্তারের স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী উক্ত আবেদন গ্রহণ করে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার রনজিৎ কান্তি দাশ।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার এম.এন.কাইছার, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক ও চকবাজার থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার মীম আয়াত উল্লাহ এবং বাকলিয়া থানা শাখার সহ সভাপতি গ্রাম ডাক্তার মিজানুর রহমান।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাকলিয়া থানা শাখার উপদেষ্টা গ্রাম ডাক্তার মোহাম্মদ ইকবাল। সম্পাদকীয় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাকলিয়া থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক গ্রাম ডাক্তার মো: তাওহীদুল ইসলাম সাঈদী।
ল্যাবএইডের চীফ অপারেটিং অফিসার মো: আলমগীর বলেন, এমবিবিএস কিংবা গ্রাম ডাক্তার যেই হউক না কেন রোগীকে ভালো সার্ভিস দিতে হলে আগে ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্ধারণ করতে হবে। কেননা ভুল রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসা করলে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমাদের ল্যাবে সাড়ে ৪ হাজার টেস্ট করানো হয়, সকল রিপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় বিদেশেও গ্রহণযোগ্য হয়।
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার কিশোর কান্তি দাশ বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে এমবিবিএস ডাক্তারের পাশাপাশি গ্রাম ডাক্তারদেরও অনেক ভূমিকা রয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে গুণীজনদেরকে ক্রেষ্ট প্রদান পূর্বক নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ ফটোসেশনে অংশ গ্রহণ করেন।
Leave a Reply