রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর কলাবাগানের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শিক্ষক মুরাদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় এক তরুণীর করা নারী নির্যাতন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার(২৭ ফেবুয়ারি) তাকে আদালতে তোলা হবে।
এর আগে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে কলেজের পরিচালনা কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষকের বিকৃত যৌন লিপ্সা, যা বলছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেন, একদিন আমাকে ডেকে জোর করে মাস্ক খুলে লিপ কিস করে। এরপর পিছন থেকে আমার জামার ভেতর হাত দিয়েছে। তারপর আমাকে ল্যাপটপ দেখায়, ল্যাপটপে পর্ন ছিল। এরপর সে জোর করে আমাকে ৩ থেকে ৪ মিনিট ভিডিওটা দেখায়।
তিনি বলেন, সে আমার পাশে এসে বসতো, হাত ধরতো, ঘাড়ের ওপর হাত রাখতো। এগুলো করতো আর বলতো আমি তো তোমার বাবার মতো, আমি তোমাকে খারাপ কিছু করতে পারি না। আমি যা কিছু করছি তা ভালোই, এগুলো খারাপ কিছু না। তুমি মাইন্ড করো না।
ভুক্তভোগী বলেন, উনি আমাদের সিনিয়র ম্যাথ টিচার (গণিত শিক্ষক)। তার নাম হলো মুরাদ হোসেন সরকার। ক্লাস সিক্সের প্রথম থেকেই ওনার কাছে আমি পড়ি। সে প্রথম দিক থেকেই আমাদের বলতো যে সে আমাদের বাবার মতো। আমি নাকি তার মেয়ে, আমার নাম তার মেয়ের নাম একই। সে আমাকে অনেক আদর করে, আমি নাকি তার কাছে স্পেশাল। প্রত্যেকটা ক্লাসে, প্রতিদিন আমাকে এ কথা বলতো সে। প্রথম দিকে আমাকে অনেক আদর করতো, ভালোভাবেই পড়াতো।
ওই ছাত্রী বলেন, একদিন সে আমার পাশে এসে বসে, আমার হাত ধরে। তারপর একদিন ল্যাপটপে পর্ন দেখায়। আমি প্রথমে ওদিকে তাকাইনি, পরে আমাকে বলে এদিকে তাকাও। আমি প্রথমে কিছু বুঝিনি। পরে আন্দাজ করতে পেরেছি যে এটা খারাপ কিছু। সে আমাকে ফোর্স করে যে এদিকে তাকাও। পরে ৩-৪ মিনিট একটা ভিডিও আমাকে দেখায়। সে পুরো ভিডিওটা দেখানোর পর আমাকে বলে যে, নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে। তুমি নিজেকে সবসময় কন্ট্রোলে রাখবা। পরে রাগ করে আমাকে বলে তুমি বাড়ি চলে যাও।
তিনি বলেন, সে সবসময় আমাদের তার ভালো কাজের ভিডিও এনে দেখাতো, তারপর বলতো আমি তো অনেক ভালো কাজ করি। আমি কখনো খারাপ কাজ করতেই পারি না। সে আমাদের এমনভাবে বুঝাইছে যে, সে আমাদের হাত ধরলে আমরা খারাপ কিছু মনে করি না। একদিন আমি ক্লাস শেষ করে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। তখন সে আমাদের দুইজনকে বলে তোমরা একটু বসো। এরপর আমাকে কাছে ডেকে হাগ করে। তখন আমার ব্রেস্টে টাচ লাগে, তখন আমি কিছু বুঝতে পারিনি। এরপর আমার বান্ধবীকে ডাকে। তাকেও হাগ করে।
ভুক্তভোগী বলেন, এরপর আরেকদিন আমাদের ডাকে, বলে খাতার কোনো একটা কাজ আছে। আমরা যাই, সে চেয়ারে বসে ছিল। আমরা পাশে সিটে বসি। পরে আমার ফ্রেন্ডের মা ফোন দিলে সে চলে যায়। তখন আমি বলি স্যার আমার আম্মু তো আসছে, আমাকে যেতে হবে। তখন তিনি বলে যে দুই মিনিট থাকো, বেশি সময় লাগবে না। পরে তার পাশের রুমে আমাকে ডাকে। পরে আমি জিজ্ঞেস করছি যে আমাকে কেন ওই রুমে যেতে হবে। সে বলে যে কাজ আছে, আসো।
ওই ছাত্রী বলেন, তখন আমি গেছি। সে বলে তোমার ব্যাগটা খোলো। আমি তখন একটু ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ পুরো কোচিংয়ে আমি একা। আমরা দুইজন ছাড়া কেউ নেই। উনি জোর করে আমাকে ব্যাগটা খোলাইছে। আমাকে বলে যে কাছে আসো। তখন আমি ভয়ে ভয়ে তার কাছে গেছি। তখন সে আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরেছে। তারপর আমার কপালে কিস করেছে।
তিনি বলেন, তারপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে আমি তোমাকে যা করেছি, সেটা আমি তোমার বাবার মতো করে করছি। তুমি উল্টাপাল্টা কিছু মনে কর না। আর তুমি যদি এ কথা কাউকে বলো, তাহলে তোমার স্কুলে রেপুটেশন খারাপ হয়ে যাবে। সবাই তোমাকে খারাপ ভাববে। সে আমাকে বারবার বুঝাতে লাগলো যে আমি তোমাকে বাবা হিসেবেই এটা করেছি।
Leave a Reply