সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১০টি পদে আওয়ামী লীগের প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
শনিবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ী বিএনপির অন্য ৩ জন হলেন, সৈয়দ ফজলে এলাহী অভি, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে বিজয়ী অন্য ৯ জন হলেন, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার, সহ-সভাপতি পদে ড. দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন, ট্রেজারার পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনছারী, সহ-সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, সহ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির (পল্লব)। সদস্য পদে বিজয়ী চার জন হলেন, রাশেদুল হক খোকন, মো. রায়হান রনী, মো. বেল্লাল হোসেন (শাহীন) ও খালেদ মোশাররফ (রিপন)।
এদিকে, জাল ভোট ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। বিএনপির প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন পুনরায় ভোট গণনার আবেদন করেছেন।
এর আগে অনেক নাটকীয়তার পর শনিবার (৯ মার্চ) বিকেল ৩টার পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়।
ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা উপলক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে প্রচুর পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যে ভবনে ভোট গণনা করা হচ্ছে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে, ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক পদে এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়টি প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত এক পত্রে শনিবার বলা হয়, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার আগেই দুঃখজনক ভাবে বহিরাগত মাস্তান শ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও তা অর্থহীন ঘোষণা, তবুও কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে তা ‘ইগনোর’ (আমলে না নেওয়া) করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার (৮ মার্চ) হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় ভোট গণনার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা শনিবার বসে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
গত শুক্রবার (৮ মার্চ) ভোরে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এর আগে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়। দুই দিনে সাত হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে পাঁচ হাজার ৩১৯ আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুই সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনী।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুই সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল। এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান নির্বাচন করছেন।
এছাড়া, সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করছেন।
Leave a Reply