নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের আলোচিত বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণের পর হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আবুল কাশেম চৌধুরী ওরফে কাশেম চেয়ারম্যানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। কাশেম চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির উপজেলার কাঞ্চননগর উকিলবাড়ি গ্রামের মৃত বদিউল আলমের ছেলে। তিনি কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ঘটনার পর থেকে প্রায় ২০ বছর বিদেশে পলাতক ছিলেন।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর পঞ্চম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ফারহানা রবিউল লিজা এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, কাশেম চেয়ারম্যান উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর পঞ্চম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আমরা তার জামিনের বিরোধিতা করেছি। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জানা যায়, ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই রাতে চট্টগ্রান নগরীর চকবাজারে নিজের ব্যবসায়িক অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে অপহৃত হন জামাল উদ্দিন। ওই সময় তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জামাল উদ্দিন। এ মনোনয়ন ঠেকাতে ও কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে তখন পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। টাকা পেতে দেরি হওয়ায় তাকে খুন করা হয়েছিল।
তার অপহরণের পর দীর্ঘদিন পুলিশ মামলা নেয়নি। প্রায় দুই বছর জামাল উদ্দিনের পরিবারের করা মামলা নিয়ে ঘটনার অন্যতম হোতা শহীদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর পাহাড়ি এলাকা থেকে জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব।
ওই মামলায় ২০১৪ সালে গ্রেফতার হওয়া আসামি সুলতান ড্রাইভারের স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে কাশেম চেয়ারম্যানের নাম। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক জামাল উদ্দিনকে কাঞ্চননগরের গহিন পাহাড়ে নিয়ে যায় সুলতান। পাহাড়ে নিয়ে গিয়েই কাশেম চেয়ারম্যানের নির্দেশে জামাল উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলি করে হত্যার আগ পর্যন্ত কালা মাহবুব, লম্বা মাহবুব ও টেংরা ওসমান জামাল উদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন।
পরবর্তীতে ওই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। বর্তমানে মামলার ১৪ আসামির মধ্যে আলমগীর কারাগারে আছেন। জামিনে আছেন ছয়জন। বাকিরা পলাতক।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই পলাতক ৯ আসামির অনুপস্থিতিতে মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতেই জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৮৪ জন। তাদের মধ্যে মাত্র ৩ জনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়েছে। গত ২২ নভেম্বর কাশেম চেয়ারম্যান উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন। উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন পান তিনি। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৩ জানুয়ারি বিচারিত আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
Leave a Reply