সংবাদ ডেস্ক : বিস্ফোরক দ্রব্য মজুদ, পুলিশের ওপর হামলার উস্কানি ও নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগের মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে রবিবার (৮ জানুয়ারি) এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। এ মামলায় ফখরুল-আব্বাসের জামিননামা দাখিল না করতে চেম্বার আদালতের আদেশটিও তুলে নিয়েছেন আপিল বিভাগ।
সেই সঙ্গে হাইকোর্টে বিএনপির এই দুই নেতার জামিন আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে জারি করা রুল ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগের আদেশের পর বিএনপির এই দুই নেতার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে সাংবাদিকদের জানান তাদের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
বিএনপির দুই নেতার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন। এ ছাড়া বিএনপির নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মো. আসাদুজ্জামান, কায়সার কামাল, মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আরো অনেকেই।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ও স্থান নির্ধারণ নিয়ে উৎকণ্ঠা-উত্তেজনার মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে জমায়েত হওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছোড়া হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে তখন ওই কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে। সেদিন ফখরুলকে গ্রেপ্তার না করলেও পরদিন রাতে বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। একই রাতে আটক করা হয় মির্জা আব্বাসকেও। পরদিন ৯ ডিসেম্বর পুলিশের ওপর হামলা ও উসকানি দেওয়ার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঠানো হয় আদালতে। আদালতে তাদের পক্ষে জামিন আবেদন হলেও তা নাকচ করে পাঠানো হয় কারাগারে। এরপর ১২ ডিসেম্বরও তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। ১৫ ডিসেম্বর ফের নাকচ হয় তাদের জামিন আবেদন।
গত ২১ ডিসেম্বর আবার জামিন আবেদন করা হলে মহানগর দায়রা জজ আদালত আবেদনটি ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির তারিখ দেন। এরপর ওই দিন আরেকটি আবেদন করা হলে জামিন নামঞ্জুর করে আবেদনটি খারিজ করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে এসে আবেদন করা হয়। সে আবেদনে ফখরুল- আব্বাসের জামিন চাওয়া হয়। মামলার এফআইআরে বিএনপির এই দুই নেতার নাম না-থাকা, দায়রা জজ আদালত থেকে মামলার এফআইআরভুক্ত দুই আসামির জামিন, বয়স, অসুস্থতা, সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে তাদের জামিন চাওয়া হয়। তবে হাইকোর্টে জামিন আবেদন
গ্রহণযোগ্য নয় যুক্তি দেখিয়ে জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ। উভয় পক্ষের শুনানির পর হাইকোর্ট গত ৩ জানুয়ারি ফখরুল-আব্বাসকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালী জামিন দেন।
সেই সঙ্গে তাদের নিয়মিত জামিন ও জামিন আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। পরদিনই জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে আবেদনের শুনানির পর চেম্বার আদালত ফখরুল-আব্বাসের জামিননামা দাখিল না করতে নির্দেশ দেন এবং আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রাখেন। আজ (রবিবার) শুনানির পর হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখে আদেশ দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
Leave a Reply