সংবাদ ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে বিতর্ক- সমালোচনা। এসব বইয়ের ‘ভুল তথ্য’ ও ‘অসংগতি’ অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। বিতর্কের শীর্ষে রয়েছে ডারউইনের তত্ত্বের বিষয়টি, যেটি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে বলা হয়েছে ‘মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি’। শিশু শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত এ বিষয়টি যুক্ত করায় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে বিতর্কের ঝড়। বিভিন্ন ইসলামি বক্তারা ওয়াজ মাহফিল, এমনকি জুমার খুতবায়ও বিয়ষটির প্রসঙ্গ তুলে পাঠ্যবই থেকে বিষয়টি বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিষয়টি আমলে নিয়ে বই থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে এই তত্ত্বটি। বাদ যাচ্ছে আরো বিতর্কিত বিষয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সমালোচনাগুলো যৌক্তিক। এই মতবাদটি মাধ্যমিক স্তরে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এছাড়া নির্বাচনের বছরে এভাবে একটা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সমালোচনা হোক তা সরকার চায় না।
ডারউইনের তত্ত্বের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, এই তত্ত্বটি ইসলাম ধর্মবিরোধী। শুধু তাই নয়, এই মতবাদ হিন্দু ধর্মের পণ্ডিতরাও স্বীকার করেন না। এই মতবাদ ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে বানর ছিল, আর সেখান থেকেই কালের বিবর্তনে ধাপে ধাপে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে।
বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘খুঁজে দেখি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস’ ঠিক তার পরের পৃষ্ঠায় অর্থাৎ ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘বিভিন্ন সময়ের মানুষ’ শিরোনাম দিয়ে চারটি ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে মূলত বানর ছিল। আর তার পরেই কয়েকটি ধাপে বানর থেকেই মানুষের আকৃতি রূপান্তরিত হয়েছে।
এছাড়াও ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নামেও ভুল করা হয়েছে। শেখ বাদ দিয়ে শুধু লেখা হয়েছে লুৎফর রহমান। ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘ছেলেবেলার মুজিব’ শিরোনামে ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি অফিসের কেরানি। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার।
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ্য বইয়ে ১১তম অধ্যায়ের ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীর শরীরের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক কিংবা বাসাবাড়িতে অভিভাবকদের সামনেও এই বর্ণনা প্রকাশ করার মতো নয়। বইয়ের এসব তথ্য যারা যুক্ত করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
বিভিন্ন ভুল ত্রুটির বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত মঙ্গলবার(২৪ জানুয়ারি) সম্মেলন করে পাঠ্যবইয়ে ভুল সংশোধন ও দায়ীদের ধরতে দুটি তদন্ত কমিটি করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এই কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে বলে মন্ত্রী জানান।
Leave a Reply