নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায়ে এক কাতারে দলমতের সবাই। রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ ময়দানে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে তাকে জানানো হয় শেষবিদায়। যাতে ঢল নামে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তার সহযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধাকে হারিয়ে কেউ বাকরুদ্ধ, কেউ ভেঙ্গে পড়েন কান্নায়। শোকাতুর সবার কণ্ঠেই উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে মোছলেম উদ্দিনের ত্যাগের নানা গল্পকথা।
না ফেরার দেশে মোসলেম উদ্দিনের এই চলে যাওয়া শোকাতুর করেছে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাদেরও। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত মুক্তিযোদ্ধারা।
পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার এবং সর্বস্তরের শ্রদ্ধা শেষে মোছলেম উদ্দিনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গরীবুল্লাহ শাহ কবরস্থানে। সেখানে সমাহিত করা হয় রাজনীতির এই সাহসী মানুষটিকে।
মোছলেম উদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় প্রথম জানাজা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মরদেহ বাড়িতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বাদ আসর বোয়ালখালীর গোমদন্ডী পাইলট স্কুল মাঠে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আরো বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় বোয়ালখালী থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মোছলেম উদ্দিনের মরদেহ নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় নিয়ে যাওয়া। সেখান থেকে তার মরদেহ রাতে লালখান বাজার বাসায় রাখা হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে সর্বশেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গরীবুল্লাহ শাহ মাজার কবরস্থানে মা এবং ভাইয়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন। তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মোছলেম উদ্দিন ১৯৬৯ সালে সরকারি কমার্স কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মোছলেম উদ্দিন ১৯৭০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৩ সাল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মোছলেম উদ্দিন ২০২০ সালে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ানকে হারিয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। চট্টগ্রামের এই প্রবীণ নেতার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
Leave a Reply