সংবাদ ডেস্ক : অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন যাঁরা দেখছেন, তাঁদের সেই ‘দুঃস্বপ্ন’ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এটা (অনির্বাচিত সরকার) আর জীবনে হবে না। আর ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা যাঁদের, আসেন নির্বাচন করেন। জনগণ যাকে মেনে নেবে, সে–ই ক্ষমতায় যাবে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনো দিন হস্তক্ষেপ করবে না।’
বৃহস্পতিবার(৯ ফেব্রুয়ারী) একাদশ জাতীয় সংসদের চলতি ২১তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
অনির্বাচিত সরকার যারা চায়, তারা ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে দেখে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সাবধান থাকতে হবে। সজাগ থাকতে হবে। এরা কোথা থেকে কী পয়সা পাবে সে লোভে, অন্যের কাছ থেকে পয়সা খেয়ে আমার দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। আমার দেশের মানুষের ওপর বিশ্বাস আছে, আস্থা আছে। বাংলাদশের মানুষ আজকে যে জীবনে একটা স্থিতিশীলতা পেয়েছে, নিশ্চয় তারা তা ধ্বংস হতে দেবে না। এটা (অনির্বাচিত সরকার) হালে পানি পাবে না।’
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু লোক বলে আসছে, দুই–তিন বছর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। যারা সংবিধানকে বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকার আনতে চায়, তারা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে কি না, সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা অনির্বাচিত সরকার চায়, তাদের হয়তো দুঃখ আছে। কারণ দেশের মানুষগুলো দরিদ্র, হাড্ডিসার থাকলে তা দেখিয়ে তারা বিদেশ থেকে ভিক্ষা নিয়ে নিজেদের উদর পূর্তি করবে, কেউ বিএমডব্লিউতে চড়বে। তাদের আমদানি কমে যাচ্ছে। এ জন্যই তারা অনির্বাচিত সরকার চায়।
অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সময় সারা দেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে ছিল। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আবার কি এ দেশের মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়? তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের নামে যাঁদের ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা, তাঁদেরকে বলব রাজনীতি করেন, মানুষের কাছে যান, জনগণের ভোট নেন, নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন। কোনো আপত্তি নাই। মানুষ যাকে ভোট দেবে, তারাই সরকারে আসবে। নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়, তা তো আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি।’
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না, অনির্বাচিত সরকার আনতে হবে। ছয়টি উপনির্বাচনে ভোট নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা রাখে। সেখানে সরকার কোনোরকম হস্তক্ষেপ করেনি, করবেও না।
গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশে উন্নয়ন হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই দাবি করেন আজকের যে উন্নয়ন, সেটা বড় বড় এনজিও, অর্থনীতিবিদ বা আঁতেলদের কারণেই হয়েছে। এটা ঠিক নয়। একমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং তার সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যথাযথ নীতিমালা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের ফলেই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা, ১৪ বছর ধরে ধারাবাহিক সরকার আছে বলে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ সুফল পাচ্ছে।
আড়ি পাতা প্রসঙ্গ
ফোনে আড়ি পাতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে বোমা তৈরির বিষয়টি শেখানো হয়, জঙ্গিবাদের প্রচার হয়। আড়ি পাতা না হলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে তথ্য পাওয়া যাবে কীভাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আড়ি পাতা নিয়েও অনেকে কথা বলেন। কারণটা কী। ঠিক কী…কোন রহস্যের কথা বলবেন, যেটা সরকার শুনে ফেললে সমস্যা হবে? সরকার শোনে না। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস—এ ধরনের কর্মকাণ্ড, সেগুলো রোধ করার জন্য যেটুকু করার সেটুকুই করে। তার বেশি আর কিছু করে না। আর এটা করা যায় বলেই…এটা আইনসিদ্ধ। এটা করা যায় বলেই এটা সব দেশে আছে।’
রমজানে খাদ্যপণ্যের অভাব হবে না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রমজান সামনে রেখে অনেক পত্রিকা নানা কিছু লিখছে। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, রমজানে খাদ্যের অভাব নেই। প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে সমস্যা নেই। পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলতেও বাধা নেই। যারা এলসি নিয়ে দুই নম্বরি করে, বাধা তাদের জন্য। রমজানে ছোলা, চিনি, খেজুর, ডাল, তেল পর্যাপ্ত আছে। আরও কেনা হচ্ছে।
আজ চলতি সংসদের ২১তম অধিবেশন শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে জানান, এ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর ২০৯ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য দেন। আলোচনা হয় ৪০ ঘণ্টা ২৭ মিনিট। ১৯টি সরকারি বিল এসেছিল, এর মধ্যে ১০টি পাস হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে পরীক্ষাধীন আছে ৭টি, পাসের অপেক্ষায় ১টি এবং উত্থাপনের অপেক্ষায় আছে একটি বিল।
Leave a Reply