নিজস্ব প্রতিবেদক : সাগর তীরে লাল-হলুদ- গোলাপি-সাদা-মেরুন নানা রঙের ফুল ফুটে আছে থরে থরে। বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুলের দল। আর তা দেখতে শিশুদের নিয়ে ভিড় করেছেন অভিভাবকরা।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারী) ছুটির দিনে চট্টগ্রাম নগরীর ফৌজদারহাট-পোর্ট লিংক রোডের পাশের বিশাল এলাকা যেন সেজেছে বসন্তের সাজে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১২২ প্রজাতির ৩ লাখ ফুল গাছ নিয়ে সেখানে শুরু হয়েছে প্রথমবারের মত আয়োজিত ৯ দিনের চট্টগ্রাম ফুল উৎসব।
মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিলো দেশে প্রথমবারের মতো ফোঁটা টিউলিপ ফুল।
এছাড়া ডালিয়া, গোলাপ, গাঁদা, হরেক রঙের টিউলিপসহ বাহারি এ ফুলের মেলায় আনন্দে মেতে উঠেছিল শিশু-কিশোররা। চট্টগ্রাম ছাড়াও যশোর, রংপুর, ঢাকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব ফুল গাছ আনা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বেরিয়ে ঝাউগাছ আর জলাশয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া ‘বন্দর-ফৌজদারহাট টোল রোড’ যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের মেরিন ড্রাইভের সাথে। ফৌজদারহাট থেকে এ টোল রোড ধরে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়ে রঙ বেরঙের ফুলের বাহার।
দেড় দশকের বেশি সময় বেদখলে থাকা সাগরের কাছের ১৯৪ একরের বেশি খাস জমি পুনরুদ্ধারের পর সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এ ফুল উৎসবের উদ্বোধন করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “সমুদ্রের পাড়ে এরকম নয়নাভিরাম একটা জায়গায় বিস্তৃত জলাশয় আছে, চারপাশে গাছপালা। এখানে স্বাভাবিকভাবে অনেক পর্যটক আসেন, পর্যটকদের জন্য এটি একটা বাড়তি পাওনা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের জন্যও একটা বাড়তি পাওনা।
“আমি আশা করব এই জায়গাটাতে প্রতিবছর তিন মাসব্যাপী পুষ্প মেলা হবে। এই মেলা শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশের মানুষের আকর্ষণ হবে। প্রয়োজনে এখানকার জলাধারে যেন ভাসমান ফুলের বেড করা হয়।”
একটি শহরকে নান্দনিক করতে হলে প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় করতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রকৃতির সাথে যদি উন্নয়নের সমন্বয় ঘটানো না হয়, তাহলে নান্দনিকতা থাকে না। ইট-পাথর কংক্রিটে পরিণত হয় শহর, যেটি অনেক শহরে হয়েছে। চট্টগ্রামকে এখনও নান্দনিক রাখার সুযোগ রয়েছে।”
ফুল উৎসব উদ্বোধনের পর “আওয়ামী লীগ পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার চেষ্টা করছে” —বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজপথে দেখলে মনে হয় ওদের গায়ে কাঁটা বিদ্ধ হয়। সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, রাজপথে আছে এবং রাজপথেই থাকবে। বিএনপির কর্মসূচির দিকে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি এবং শান্তি সমাবেশ করছি। কারো সঙ্গে পালটা কর্মসূচি আমরা দিচ্ছি না। আমাদের স্বাভাবিক কর্মসূচি আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিএনপি ও তাদের বাইরেরও দু-একজন এমন কথা বলছেন। সরকারে থাকি কিংবা না থাকি, যখন ছিলাম না তখনও রাজপথে ছিলাম, এখন সরকারে আছি, ভবিষ্যতে থাকলে তখনও রাজপথে থাকব।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ, সীতাকুন্ডের ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “চট্টগ্রামে দীঘদিন ধরে অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে শহরে ভিতরের জায়গাগুলো সংকুচিত হতে হতে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আমরা সেখানে পার্কের জায়গা পাচ্ছি না।
“শ্বাস ফেলার জায়গাও ছিল না। এই জায়গাটাও সরকারি খাস জমি কিন্তু দীর্ঘদিন অন্যরা ব্যবহার করত। সেখান থেকে সাধারণ মানুষের জন্য অবমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি এটা এভাবে করেই মুক্ত থাকবে। আশা করি, জেলা প্রশাসন নিজেরাই এখান থেকে আয় করে সেটা মেনটেইন করতে পারবে।”
সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর ছলিমপুর মৌজার বালুচর শ্রেণির জায়গাটি এর আগে দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘শুকতারা’ নামে একটি পর্যটন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ। সম্প্রতি সেখান থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।
Leave a Reply